আত্মপ্রকাশ করুন নিজের স্বকীয়তাকে
“ও কেমন যেনো, ভীষন মুখচোরা স্বভাবের!” নিজেকে নিয়ে এই কথাটা অনেক শুনেছেন হয়তো, তাইনা দিনদিন আরো বেশি করে নিজের মাঝে গুটিয়ে যাচ্ছেন আপনি। রোজকার বাঁধা ধরা কাজের বাইরে অন্যকিছুর সাথেও জড়াচ্ছেন না। তার ফলটা কি খুব ভালো হচ্ছে আপনার জন্য প্রতিনিয়ত অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন না এতে একবার ভেবে দেখুন, আসলেই এই জীবনটা চেয়েছিলেন কিনা। দিনগুলি এমন করে কাটিয়ে দিতে সত্যিই মন সায় দিচ্ছে আপনার যদি মনের সায় থাকে, তবে তাই চলতে দিতে পারেন আপনি। কিন্তু যদি কখনো মনে হয় এমনটা হবার ছিলো না, অকারণেই লুকিয়ে থেকেছেন এতোদিন সবকিছু থেকে, তবে এবার আড়াল ভেঙ্গে বেরিয়ে আসুন।
জীবনটা এই ধারায় অনেকগুলো দিন চলেছে বলে ভেবে বসবেন না যে বাকি দিনগুলো সব এভাবেই কাটবে। দিন পাল্টানোর চাবিকাঠি আপনার হাতে আছে, আপনার পক্ষে সম্ভব জীবনের মোড় ঘুরিয়ে নেয়া। বিশ্বাস আনুন এই কথাটার ওপর।
শখের কিছু না কিছু তো প্রতিটা মানুষেরই থাকে। একদমই কোন শখ রাখে না, এমন মানুষের সংখ্যা পৃথিবীতে কম। নিজের শখগুলিকে এবার একটু প্রশ্রয় দিন। একটু যত্নে বাড়তে দিন। নিজের মাঝেই আর পুষে রাখবেন না। মেলে ধরুন নিজেকে যে কাজই আপনি পারেন তাতে, সবাইকে দেখতে দিন।
গান ভীষন পছন্দ আপনার, কেবল শুনতে নয় গাইতেও ভালোবাসেন। তো খালি গলায় গাওয়ার অভ্যাস করুন। গলায় সুর নেই, গানের তাল নেই, লোকে শুনলে হাসবে, এসব চিন্তা বাদ দিন। আপনি গান গাইবেন নিজের আনন্দে, নিজের মনমেজাজ ভালো রাখতে। অন্য কোন বিষয়ে মনযোগ না দেয়ার চেষ্টা করে এবার নিজেকে সন্তুষ্ট করতেই মন দিন।
কখনো ছবি আঁকার অভ্যাস থেকে থাকলে সেটাকে আবার জাগিয়ে তুলুন। নিয়মিত আঁকার চেষ্টা করুন এবার। অবসরে স্কেচবুকে টুকিটাকি আঁকিবুকি চলতে দিন। হোক সেসব কাকের কিংবা বকের ঠ্যাং, আপনার শখের তোলা কিন্তু সবসময়ই লাখ টাকা! চাইলে কোথাও আঁকা শিখতেও পারেন। চর্চা করলেই যেকোন বিষয়ে দক্ষতা আসে সেটা মাথায় রাখুন।
ফটোগ্রাফি পছন্দ ছবি তুলতে ইচ্ছা হয়, ছবি দেখতে ভালো লাগে খুব তো ইচ্ছাটাকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করুন। কাজটা শেখার উদ্যোগ নিন। ফটোগ্রাফি শেখানোর অনেক ভালো সব প্রতিষ্ঠান আছে দেশে, যুক্ত হয়ে যান তেমন কোথাও। যতোই কাজে জড়াবেন, নিজের হাতে চর্চা করতে থাকবেন ততো আপনার হাত খুলবে। তাছাড়া শখের জিনিষ নিয়ে ব্যস্ত থাকাটা আপনার উপকারই করবে, ক্ষতি নয়।
হয়তো আপনি লিখতে ভালোবাসতেন। বন্ধুমহলে, পরিবারে আপনার লেখার প্রশংসা হতো খুব। সময়ের সাথে সেই অভ্যাসটাও হারিয়ে যেতে দিয়েছেন। এইবেলা আবারো শুরু করুন তবে। যা ভালো লাগে লিখুন, রোজনামচা বা গল্প-কবিতা যাই হোক লিখতে থাকুন। এবং হ্যাঁ, নিজের মাঝেই আর সীমাবদ্ধ রেখে দেবেন না শখের কাজটাকে। ছড়িয়ে যেতে দিন।
কোন নির্দিষ্ট কাজে আপনার খানিকটাও দক্ষতা থাকলে সেটাকে নিয়মিত চর্চায় রাখুন অবশ্যই। শখের কাজটি আপনার কেবল নেশা নয়, পেশাও হতে পারে যদি আপনার পরিপূর্ণ চেষ্টা থাকে। কাজেই চেষ্টা করুন, চেষ্টা না করে হাল ছেড়ে দেয়াটাই সত্যিকারের পরাজয়।
বারবার নিজেকে একটি কথা মনে করাতে থাকুন, গুটিয়ে থাকা চলবে না। সব মানুষকেই বিধাতা কিছু একটা হলেও বিশেষ প্রতিভা দিয়ে পাঠিয়েছেন। সেটা নিজের হাতে ধ্বংস করে দেবেন না। ছোটখাটো কাজ দিয়েই বড় স্বপ্নের ধাপ তৈরি করতে থাকুন। তাতেই কি জীবনে সাফল্য আসছে না অনেকখানি
নিজের চেনাজানার সীমানাটা বাড়িয়ে নিন। খুব ছোট্ট একটা পরিসরে থেকে, অল্প কিছু মানুষের ভীড়ে আপনি নিজে যেমন বেশি কিছু চিনতে পারবেন না, তেমন আপনার পরিচয়টাও বিস্তৃত হতে পারবে না। কাজেই বাইরের বিশাল পৃথিবীতে পা রাখুন। মিশতে চেষ্টা করুর অনেক রকম মানুষের সাথে। তাদের ভীড় থেকে নিজের সমমনা মানুষদের খুঁজে নিতে হবে আপনাকে। নিজের জ্ঞান, চিন্তাধারা বা অভিজ্ঞতা ভাগ করুন সবার সাথেন। সাথের মানুষগুলোর কথাও শুনুন, জানুন তাদের কাছ থেকে। এভাবে আপনি আরো সমৃদ্ধ হবেন দিনদিন।
কাছের মানুষেরা আপনাকে এগিয়ে যেতে অনুপ্রেরণা যোগাবে ঠিকই, কিন্তু জীবনের নতুন পথে পা ফেলতে হবে তো আপনাকেই। তাই সবার আগে নিজেকে নিজে সাহস দিন। আস্থা রাখুন নিজের ওপর, নিজের কাজগুলিকে ভালোবাসুন। অবশ্যই একটি চমৎকার জীবন এই পথে আপনার অপেক্ষায় আছে, এবার কেবল আপনার আড়াল থেকে বের হবার পালা।