কিছু ভুল অভ্যাসের কারণে আপনার পেটে জমছে বিচ্ছিরি মেদ

কিছু ভুল অভ্যাসের কারণে আপনার পেটে জমছে বিচ্ছিরি মেদ

পেটের মেদ ছোট আকৃতিরও যদি হয় তবুও তা বেশ বিপদজনক। কারণ একবার যদি কোন ভাবে পেটের মেদ সৃষ্টি হয়ে যায় সেটা বড় হতে বাধ্য। তাই পেটের মেদের কারণ খুবই গুরুতর এবং একে গুরুত্বের সাথেই সবার দেখা উচিত। আর এটাও সবারই জেনে রাখা উচিত যে পেটের মেদ জমাকৃত স্থান থেকে মেদ কমানো বেশ কঠিন একটি কাজ। তাই কিভাবে এই পেটের মেদ থেকে পরিত্রাণ পাবেন তা জানার জন্য আগে কেন পেটের মেদ সৃষ্টি হয় তা জানা থাকলে অনেক উপকৃত হবেন।

নিষ্ক্রিয়তা

সুস্থ থাকার জন্য শারীরিক ব্যায়াম করার কোন বিকল্প নেই এটা অনেক আগে থেকেই প্রতিষ্ঠিত। সঠিক দেহের আকৃতি বহির্গত এবং অভ্যন্তরীণ উভয় ক্ষেত্রের জন্য শারীরিক ব্যায়াম অবশ্যই প্রয়োজন। তাই যখন আপনি নিয়মিত ভাবে শারীরিক ব্যায়াম শুরু করবেন তখন আস্তে আস্তে পেটের মেদও কমতে শুরু করবে তখন আর সেই পেটের মেদ লুকানোর জন্য ঢিলেঢালা পোশাক পরার প্রয়োজন হবে না।

রাতে দেরি করে খাওয়া

রাতের খাবার খাওয়ার পর তা হজম হওয়ার জন্য সময়ের প্রয়োজন। ভরপেট খাবার খেয়ে সাথে সাথেই ঘুমাতে গেলে সেই খাবারটা আর সঠিকভাবে হজম হওয়ার সময় পায়না এবং দেহে খাদ্যোপাদানগুলোর সঠিক বণ্টনও হয় না। এর ফলে তা পেটের মেদ হিসেবেই জমা হয়।

ইটিং ডিজঅর্ডার

অনেকেরই খাবার সম্পর্কীয় এই রোগটি রয়েছে যা আমরা অনেকেই জানি না। যদিও একে অনেকেই রোগ মনে করেন না। যখন মন খারাপ থাকে তখন অনেকেই ভাবেন যে বেশি করে খেয়ে সেটা ভালো করবেন। আসলে সেটি কোন সমাধান না। কারণ এই কাজটি কখনো মানসিক ভাবে আপনাকে সাহায্য করবেনা শুধু পেটের মেদ বাড়ানো ছাড়া। খাবার প্রতি এভাবে নেশাগ্রস্ত না হয়ে চেষ্টা করুন শারীরিক ব্যায়াম করতে। এটা বেশ উপকারে আসবে। চেষ্টা করুন ইয়োগা করতে এটি দুশ্চিন্তা দূর করতে সাহায্য করবে।

বিষণ্ণতা

আমাদের আধুনিক সমাজ জীবনে বিষণ্ণতায় ভোগার যথেষ্ট কারণ রয়েছে এবং আমাদের অনেকেরই অনেকটা সময় বিষণ্ণতায় কাটেও। এই বিষণ্ণতাও পেটের মেদের একটি কারণ। কারণ বিষণ্ণতায় ভুগলে তখন দেহে কর্টিসল নামক একপ্রকার হরমোন নিঃসৃত হয়। আর এই কর্টিসল হরমোন পেটের চারদিকে চর্বি জমাতে সাহায্য করে পেটের মেদ বৃদ্ধি করে।

কম প্রোটিনযুক্ত খাবার

প্রোটিন আমাদের দেহের রক্তের শর্করার ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য প্রয়োজন। এটি ইন্সুলিনের মাত্রা কমিয়ে বিপাক ক্রিয়াকে বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। আর বিপাকক্রিয়ার হার বৃদ্ধি পাওয়া মানেই দেহে চর্বি পরিমাণ কমায়। তাই যদি কম প্রোটিনযুক্ত খাবার খাওয়া হয় তাহলে দেহে চর্বির পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

সময়মত খাবার না খাওয়া

অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর। যখন শরীর জানবে না ঠিক কখন পরবর্তী খাবার আসবে তখন শরীর দেহে চর্বি জমা করা শুরু করে। তাই এই অবস্থা এড়ানোর জন্য সঠিক সময় এবং সঠিক বিরতিতে খাবার গ্রহণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর ফলে শরীরের শক্তির সরবরাহ নিশ্চিত থাকবে।

ঘুমের অপর্যাপ্ততা

প্রতিটি প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের জন্য দৈনিক ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানো খুবই প্রয়োজন। তাই কম ঘুমিয়ে বেশিক্ষণ জেগে থাকলে তা কর্টিসল হরমোনের উৎপাদন বাড়ায় এবং বেশি মিষ্টি খাবার বা যেকোন খাবারের ইচ্ছাকেও বাড়ায়। তাই এটিও মেটের মেদ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ।

মদ্যপান

মদ্যপানের ফলে তা দেহে ক্যালোরির পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। যা দেহের ওজন বৃদ্ধির সাথে সাথে পেটের মেদও বৃদ্ধি করে।

কার্বনেটেড ড্রিঙ্কস খাওয়ার ফলে

কার্বনেটেড ড্রিংকসগুলোতে অনেক বেশি পরিমাণ চিনি থাকার ফলে এগুলো থাকে ক্যালোরিতে পরিপূর্ণ। এসব ড্রিংকসগুলোতে থাকা অতিরিক্ত চিনি খাবার ইচ্ছাকে বাড়িয়ে দেয় এবং প্রয়োজনের তুলনায় বেশি খাওয়া হয়। আর এভাবেই পেটের মেদ বৃদ্ধি পায়। আবার অনেকে মনে করেন ডায়েট ড্রিংকসগুলো খেলে কোন সমস্যা হয় না কিন্তু সেগুলোও অনেক ক্ষতিকর।

অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস

প্যাকেট ও প্রক্রিয়াজাত করা খাবারগুলো দেহে আক্রমণাত্মক ভাবে ক্যালোরির পরিমাণ বাড়ায়। কারণ এসব খাবারগুলোতে চিনি ও ক্যালরির পরিমান খুব বেশি থাকে যা পেটের মেদ বৃদ্ধির জন্য দায়ী। তাই যে কোনো প্যাকেটজাত, টিনজাত ও প্রক্রিয়াজাত করা খাবার গুলোর প্যাকেটে উপাদানগুলোর নাম এবং পরিমানণ দেখলেই হয়তো সবারই সেটা বুঝতে পারবেন।

মেনোপজ পর্যায়ে

মহিলাদের মেনোপজ পর্যায়ে দেহে বিভিন্ন ধরনের হরমোনের পরিবর্তন হয়। যার ফলে ওই বয়সে মহিলাদের পেটের মেদ বৃদ্ধির একটা প্রবণতা দেখা দেয়।

বংশগত কারনে

পেটের মেদ অনেক সময় বংশগত কারণেও হতে পারে। যদি বাবা মায়ের কারো পেট মেদ বহুল থাকে তাহলে ছেলে মেয়েদের মাঝেও পেটের মেদ হওয়ার প্রবণতা দেখা দেয়। তাই সেসব ক্ষেত্রে খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনযাপনের ধারায় অবশ্যই একটু অতিরিক্ত মনোযোগী হতে হবে।