‘সুন্দর মুখের জয় সর্বত্র’ এই কথাটি পুরোপুরি সত্য না হলেও একেবারে মিথ্যে নয়। মূলত আমাদের বাহ্যিক সৌন্দর্য প্রকাশ পায় ত্বকেই। ত্বক ভালো রাখতে আমাদের কী কী খাওয়া উচিত তা কম-বেশি সবাই জানি। কিন্তু কোন কোন খাবার ত্বকের জন্য প্রয়োজনীয় বা ক্ষতিকর, সে ব্যাপারে আমরা অনেকেই অজ্ঞ। তাই না বুঝেই আমরা এমন অনেক খাবার বেশি অথবা কম খাই।
আজকে চলুন জেনে নিই কোন খাবারগুলো আমাদের ত্বকের জন্য ক্ষতিকর :
১/অতিরিক্ত লবণ-লবণ আমাদের জন্য একটি অত্যাবশ্যকীয় উপাদান, কিন্তু তা অবশ্যই একটি নির্দিষ্ট মাত্রা পর্যন্ত। অতিরিক্ত লবণ শরীরের জন্য হুমকিস্বরূপ। প্রয়োজনের চেয়ে বেশি লবণ ত্বকের চামড়া স্ফীত করে তোলে এবং ব্রণ সৃষ্টি করে। ত্বক প্রাণহীন ও অনুজ্জ্বল হওয়ারও অন্যতম প্রধান কারণ মাত্রাতিরিক্ত লবণ খাওয়া। তাই যেকোনো খাবারে পরিমিত পরিমাণে লবণ ব্যবহার করা উচিত।
২/ক্যাফেইন-চা-কফি আমাদের সবারই প্রিয়। এতে থাকে ক্যাফেইন, যা শরীরকে চাঙ্গা করে। কিন্তু অনেক বেশি চা-কফি পান করা শরীর বা ত্বক কোনোটির জন্যই ভালো না। চা বা কফিতে যে ক্যাফেইন আছে তা শরীরকে দ্রুত পানিশূন্য করে, কর্টিসোল হরমোনের নিঃসরণ বাড়ায়, ঘুমের চক্রকে ব্যাহত করে; যার কারণে ত্বকের আর্দ্রতা কমে যায় এবং ত্বক ক্লান্ত ও বুড়োটে দেখায়। তার সাথে এটি রক্তনালির ওপর চাপ সৃষ্টি করে, দেহে চর্বি বাড়ায়; যার ফলে পরবর্তীতে চামড়া ফাটা শুরু হয়।
৩/তৈলাক্ত খাবার-ভাজা-পোড়া জাতীয় অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার খেলে ত্বকের উজ্জ্বলতা নষ্ট হয়। তেল প্রধানত ত্বকে একধরনের টক্সিন তৈরি করে, যা ত্বকে নীরব প্রদাহ সৃষ্টি করে। এছাড়া ওজন বেড়ে যাওয়া তো আছেই।
৪/চিনিজাত দ্রব্য-মিষ্টি কোনো জিনিসই খুব বেশি পরিমাণে খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো না। কেননা রক্তে চিনি বা শর্করার পরিমাণ বেড়ে গেলে গ্লাইকেশন প্রোডাক্ট তৈরি হয় দেহে আর তা ত্বকের কোলাজেন তৈরিতে বাধা দেয়। ফলে ত্বক সতেজতা হারিয়ে নিষ্প্রভ হতে থাকে ও ধীরে ধীরে বলিরেখা দেখা দেয়া শুরু করে। মিষ্টি খাদ্যের প্রতি আসক্তি বেশি থাকলে অবশ্য হতাশ হওয়ার কিছু নেই, আপনার ‘সুইট টুথ’কে সন্তুষ্ট করতে মিষ্টি ফল তো আছেই!
৫/শোধিত খাদ্য-প্রসেসড খাবারে সাধারণত ফাইবার কম, গ্লুকোজ ও সোডিয়াম পরিমাণে বেশি থাকে। খাদ্যাভ্যন্তরীণ পুষ্টি হারিয়ে যায় এ কারণে এবং চামড়ার উপর বিরূপ প্রভাব পড়ে। শোধিত খাদ্য যতটুকু সম্ভব বাদ দিয়ে শস্য, বীজ ও ফল দিয়ে পেটপূর্তি করাই বুদ্ধিমানের কাজ।
৬/অ্যালকোহল ও তামাকজাতীয় দ্রব্য-ধূমপান মানবদেহের জন্য ক্ষতিকরÑ তা সবার জানা, কিন্তু ধূমপানের ফলে ত্বকের যে কী পরিমাণ ক্ষতি হচ্ছে তা অনেকের অজানা। অ্যালকোহলেরও ক্ষতিকর দিক বলতে গেলে একই। এসব সেবন করলে চামড়ায় পানিশূন্যতা দেখা দেয়, এমনকি ধীরে ধীরে ত্বকের অভ্যন্তরীণ নালিগুলো প্রশস্ত হওয়া শুরু করে যার ফলে ত্বক নিস্তেজ ও প্রাণহীন দেখায়। এর ভয়াবহতা এখানেই সীমাবদ্ধ নয়, ভবিষ্যতে স্কিন ক্যান্সার থেকে শুরু করে জটিল চর্মরোগ দেখা দেয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।