শীতে ত্বকে রুক্ষ্ণভাবটা খুব দ্রুত চলে আসে। আর তাই এ সময় ত্বক’কে সজীব রাখতে প্রয়োজন বাড়তি যত্নের। শুধু তাই নয়, প্রতিদিনকার জীবনের অতিরিক্ত স্ট্রেস আর ক্লান্তির ছাপ দূর করতেও প্রয়োজন সুনির্দিষ্ট রূপরুটিন। শীতে ত্বকের এই বাড়তি যত্নে কার্যকর পদক্ষেপ দিতে পারে ফেসিয়াল। ফেসিয়ালের নানান ধরন নিয়ে এ সপ্তাহের রূপচর্চা শহরগুলোতে এখন মোড়ে মোড়ে আছে বিউটিপার্লার। আর তাই নানান ধরনের ফেসিয়ালের জন্য নির্ভর করতে পারেন এসব বিউটিপার্লারের উপরে। তাছাড়া চাইলে বাজার থেকে ফেসিয়াল প্যাক কিনে ঘরে বসেও ফেসিয়াল করা যায়। এখানে ফেসিয়ালের বিভিন্ন ধরন সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
শীতে ত্বকের বিভিন্ন ফেসিয়াল
শীতে ত্বকের বিভিন্ন ফেসিয়াল-
ক্লাসিক ফেসিয়াল:
ক্লাসিক ফেসিয়াল সাধারণত ত্বকের উপরই একধরনের সূক্ষ্ম আস্তরণ তৈরি করে। এধরনের ফেসিয়ালে ক্লিনজিং, টোনিং, নরমাল ও মেশিন ম্যাসেজ ব্যবহার করা হয়। মুখ, গাল ও চোখের তলার নরম অংশের জন্য এ ফেসিয়াল আদর্শ। এ ফেসিয়ালে ম্যাসেজের সময় কোনো ক্রিম ব্যবহার করা হয় না। ত্বক পরিষ্কার করা, ব্ল্যাকহেডস্ পরিষ্কার করা, টোনিং ও প্রোটেক্টিভ লোশন ব্যবহার করেই এই ক্লাসিক ফেসিয়াল করা হয়।
এরোমাথেরাপি ফেসিয়াল:
ত্বকের স্বাভাবিক রক্ত চলাচল রাখা এবং ক্লান্তি দূর করতে এই ফেসিয়াল অত্যন্ত কার্যকর। এ ফেসিয়ালে এসেনসিয়াল অয়েল ব্যবহার করা হয়। এ এসেনসিয়াল অয়েল খুব দ্রুত আপনার ক্লান্তি দূর করবে এবং নার্ভকে শান্ত করবে। এ কাজে ক্যারিয়ার অয়েলের সাথে এসেনসিয়াল মিশিয়ে ক্রিমের মতো তৈরি করে ব্যবহার করতে পারেন। তবে পুরো প্রক্রিয়ায় যাবার আগে অবশ্যই ত্বক’কে ভাল করে পরিষ্কার করে নিতে হবে। এই ফেসিয়ালে ম্যাসেজ করতে হবে ত্বকের কিছু নির্দিষ্ট প্রেশার পয়েন্টে।
গ্যালভানিক :
ত্বকের সহ্যক্ষমতা বাড়াতে মূলত এই গ্যালভানিক ফেসিয়াল কার্যকর ভূমিকা রাখে। যখন আপনার ত্বকে কোনো নির্দিষ্ট স্কিন ট্রিটমেন্ট চলছে তখন এই গ্যালভানিক ফেসিয়াল আপনার ত্বকের ধারণ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেবে। যাদের ত্বক শুষ্ক ও প্রাণহীন তাদের ত্বকে অতিরিক্ত অর্দ্রতা বাড়াতে এ ফেসিয়াল সবচেয়ে কার্যকর। পাশাপাশি ত্বকের অতিরিক্ত তৈলাক্ত ভাব কমাতেও এই ফেসিয়াল ব্যবহার করা যেতে পারে।
ফ্লাওয়ার-পাওয়ার ফেসিয়াল:
যাদের ত্বকে টানটানভাবটা একটু কম তাদের জন্য এ ফেসিয়াল সবচেয়ে কার্যকর। ত্বকে রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া স্বাভাবিক রাখতে এ ফেসিয়াল ব্যবহার করা হয়ে থাকে। বয়সের ভারে ত্বক যখন ন্যুব্জ তখন এ ফ্লাওয়ার-পাওয়ার ফেসিয়াল আপনার ত্বককে সতেজ, টানটান আর মসৃণ করতে পারে। ফুলের নির্যাস থেকে তৈরি ক্রিম দিয়ে এই ফেসিয়ালে ম্যাসেজ করা হয়। গোলাপ, লেভেন্ডার, জুঁই এমন অনেক ধরনের ফুল দিয়েই বাজারে ক্রিম তৈরি হয়। এই ম্যাসেজ হতাশা, ঘুমের সমস্যা, ক্লান্তি দূর করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
ডায়মন্ড ফেসিয়াল:
বয়সের ছাপ রুখতে এই ফেসিয়ালের জুড়ি নেই। ডায়মন্ড ফেসিয়াল ত্বকের অতিরিক্ত টক্সিন ধুয়েমুছে ত্বকে অক্সিজেন সরবরাহ বাড়িয়ে দেয়। ফলে ত্বক অতি দ্রুত লাবণ্যতা ফিরে পায়। এ ধরনের ফেসিয়ালে প্রথম ধাপে ত্বককে গভীরভাবে পরিষ্কার করা হয়। এরপর ডায়মন্ড এক্সফোলিয়েটিং স্ক্রাব দিয়ে ত্বক ঘষেমেজে ঝকঝকে করা হয়। এতে ত্বকের মরা চামড়া ঝরে পড়ে আর ত্বক হয়ে ওঠে টানটান। এর পরে ডায়মন্ড ক্রিম দিয়ে ত্বককে আরো লাবণ্যময় করে তোলা হয়। এ ডায়মন্ড ক্রিমে আছে ডায়মন্ড পাউডার, অরেঞ্জ অয়েল, বেসিল, খেজুর ও পদ্মফুলের নির্যাস। এগুলো এদিকে যেমন ত্বকের পুষ্টি জোগায় অপরদিকে সূর্যের ক্ষতিকারক রশ্মি থেকে ত্বক’কে রক্ষা করে। ক্রিম দিয়ে ম্যাসেজ হয়ে যাবার পর ত্বকে লাগানো হয় ডায়মন্ড মাস্ক। ফেসিয়াল করার সময় গরম তোয়ালে দিয়ে ত্বকের ভাপ নিন। স্ক্রাব দিয়ে ত্বকের মৃত সেলগুলোকে ঝরিয়ে ফেলুন আর ত্বক থেকে মাস্ক রিমুভ করার পরে কিছুটা সময় ত্বককে বিশ্রাম দিন। দেখবেন এমন একটা ফেসিয়াল এই রুক্ষ্ণ শীতেও আপনার ত্বক’কে রাখবে কোমল, মসৃণ আর সজীব।