শরতের শুভ্রতায় ফ্যাশনের আভিজাত্য
শরৎকালে পোশাক নির্বাচনের ক্ষেত্রে আরামদায়ক ও প্রকৃতির রং প্রাধান্য দেওয়ার পরামর্শ দেন বাংলাদেশ গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের বস্ত্র পরিচ্ছদ ও বয়নশিল্প বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শাহ্মিনা রহমান।
তিনি বলেন, “এ সময়ে পুরোপুরি গরমের রেশ কমে যায় না। আবার মেঘ বৃষ্টির খেলা চলতে থাকে। তাই সুতি ও জর্জেট কাপড় বেছে নেওয়া ভালো।”
“আরামের কথা চিন্তা করে যে কেউ শিফনের তৈরি পোশাক পছন্দের তালিকায় রাখতে পারেন। এই ধরনের কাপড় বাতাস চলাচলে সহায়ক এবং বৃষ্টিতে ভিজলেও তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যায়।” বললেন এই অধ্যাপক।
তিনি আরও পরামর্শ দেন, পুরুষেরা টি-শার্ট, শার্ট, ফতুয়া বা ঢিলেঢালা পাঞ্জাবি পরতে পারেন এই মৌসুমে।
শরৎকালের পোশাকের রং বাছাই করার ক্ষেত্রে এই ঋতুর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে চললেই দেখতে বেশ ভালো দেখায়। শরতের কাশফুল আর নীল সাদা আকাশের সঙ্গে মিলিয়ে সাদা, ধূসর, নীল ইত্যাদি রং প্রাধান্য দেওয়া যেতে পারে। এই ঋতুর সঙ্গে যে কোনো নীল রং বেশ মানিয়ে যায়। সাদা, ঘিয়া, হালকা গোলাপি ইত্যাদি রং বেছে নেওয়া যেতে পারে।যাদের গায়ের রং একটু চাপা তারা হালকা নীল এবং যাদের গায়ের রং উজ্জ্বল তারা গাঢ় নীল পোশাক বেছে নিতে পারেন। কিশোরী ও তরুণীরা যে কোনো রং বেছে নিতে পারেন পোশাকের ক্ষেত্রে।
তবে একটু বয়স্করা সাদা, ধূসর অথবা হালকা নীল রং বেছে নিলে দেখতে ভালো লাগবে।
তরুণ ফ্যাশন ডিজাইনার মুমু মারিয়া বলেন, “এই সময়ে সাদা রংই বেশি মানিয়ে যায় প্রকৃতির সঙ্গে। তবে অনেকেই সাদা রংয়ের পোশাক পরতে কিছুটা সংকোচে থাকেন।”
তিনি আরও বলেন, “যাদের গায়ের রং কিছুটা চাপা তাদের মধ্যে এক ধরনের ধারণা কাজ করে যে, সাদা রংয়ের পোশাকে দেখতে আরও কালো দেখাতে পারে। এক্ষেত্রে অফ হোয়াইট বা ক্রিম রং বেছে নেওয়ার যেতে পারে।”
“সাদা রং হল ক্যানভাসের মতো। এই রংয়ের সঙ্গে যেকোনো রং মানিয়ে যায়। তাই কেউ যদি শুধু সাদা পোশাক এড়িয়ে চলতে চান তাহলে সাদার সঙ্গে অন্য রং নিয়ে খেলা করতে পারেন। সাদার প্রাধাণ্য ধরে রাখতে চাইলে সাদা পোশাকের উপর সোনালি বা ব্রোঞ্জ রংয়ের সুতার কাজ বা ব্লক করা পোশাক পরা যেতে পারে। তাছাড়া সাদা পোশাকের সঙ্গে অন্য রংয়ের ওড়না, সাদা শাড়ির সঙ্গে অন্য রংয়ের ব্লাউজ বেশ মানানসই।” পরামর্শ দিলেন মুমু।
“সাদার সঙ্গে অন্য রংয়ের গহনা পরেও নতুনত্ব আনা যেতে পারে। তাছাড়া অনুষ্ঠানে সাদা পরলে কিছুটা ভিন্নতা আনতে উজ্জ্বল রংয়ের জুতা বেছে নেওয়া যেতে পারে। সেক্ষেত্রে হাতের ব্যাগ বা পার্সও হতে হবে একই রংয়ের। অলঙ্কারের রংও মিলিয়ে নেওয়া যেতে পারে।” বলেন মুমু।শুধু সাদাই নয় এই সময় যে কোনো রংই বেছে নেওয়া যায়। কেউ চাইলে উজ্জ্বল রংয়ের পোশাকও বেছে নিতে পারেন তবে সেক্ষেত্রে কোথায় যাচ্ছেন এবং উপলক্ষ্য কী সে বিষয়ও মাথায় রাখতে হবে। এই সময়ে গরম পুরোপুরি যায় না, তাই সে দিক থেকে চিন্তা করলে হালকা রং বেছে নেওয়াই বুদ্ধিমানের হবে।
শরতের সাজসজ্জা নিয়ে কথা বলেন ‘রেড’ বিউটি পার্লারের কর্ণধার আফরোজা পারভিন।
তিনি বলেন, “শরৎ মানে ফুরফুরে বাতাস আর স্নিগ্ধ আবহাওয়া। গ্রীষ্মের বিদায় আর শীতের আগমনী এই সময়টায় আবহাওয়া বেশ আরামদায়ক। তবে রোদের তেজ আর গরমের তীব্রতা পুরোপুরি কমেনি, তাই পোশাকের রং বাছাই ও মেইকআপের ক্ষেত্রে হালকা মেইকআপ বেছে নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।”
মেইকআপের বেইস যতটা সম্ভব স্বাভাবিক রাখা উচিত। কারণ এতে দেখতে ভালো ও স্নিগ্ধ লাগবে। তাছাড়া চোখের মেইকআপে সাদা ও নীলের প্রাধাণ্য তুলে ধরেন আফরোজা পারভিন।
তিনি বলেন, “চোখে সাদা আইশ্যাডো ব্যবহারে চেহারায় উজ্জ্বলভাব ফুটে ওঠে। তাছাড়া সাদা বাদে রূপালি, হালকা গোলাপি, বেইজ বা ঘিয়া, হালকা বাদামি ইত্যাদি রংও ভালো মানাবে।”
“এই সময় আকাশের রংয়ের সঙ্গে মিলিয়ে চোখে নীল কাজল বা আইলাইনার বেশ মানিয়ে যায়। আর গালে ব্লাশন ব্যবহারের ক্ষেত্রেও বেছে নিতে হবে হালকা গোলাপি বা কমলা রংয়ের ব্লাশন।” বললেন এই রূপবিশেষজ্ঞ।
এই মৌসুমে গাঢ় রংয়ের লিপস্টিক এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেন আফরোজা।তিনি বলেন “এ সময় পরিবেশ খুবই স্নিগ্ধ থাকে। তাই হালকা রংয়ের লিপস্টিকগুলোই বেশি ভালো লাগে। তবে কেউ যদি গাঢ় রং বেছে নেন সেক্ষেত্রে চোখের মেইকআপ এড়িয়ে চলতে হবে। শুধু মাস্কারা বা হালকা কাজল পরতে পারেন চোখে। আর গাঢ় লিপস্টিকের ক্ষেত্রেও গোলাপি বা মৌভ রং বেছে নেওয়া উচিত। ফলে দেখতে উগ্র লাগবে না।”
আফরোজা পারভিন এই মৌসুমে পোশাকের সঙ্গে রূপার গয়না বেশি ভালো লাগবে বলে জানান। তাছাড়া কাঠের, সুতার বা অন্যান্য গহনাও পরা যেতে পারে। আর মুখের গড়ন হিসেবে এবং নিজের সঙ্গে মানানসই কপালে একটি টিপ এই সময়ের সাজে পূর্ণতা এতে দেবে।