ত্বকের সমস্যা বছরজুড়েই থাকে। তবে শীতে একটু বেশি থাকে। শুষ্ক, তৈলাক্ত, স্বাভাবিক কিংবা মিশ্র—ত্বক যে ধরনেরই হোক, সমস্যা হবেই। কারণ, একটাই, ত্বকের সবচেয়ে ওপরের যে স্তর, সেই এপিডারমিসে এ সময় পানির পরিমাণ কমে গিয়ে শুষ্কতা বেড়ে যায়। পাশাপাশি এ সময় পানি খাওয়ার পরিমাণও কমে যায়। ফলে ত্বক আরও শুষ্ক হয়ে উঠতে থাকে। এই শুষ্কতাকে আর্দ্রতায় না নিয়ে আসতে পারলেই সমস্যা। শুষ্কতা, সূর্যের আলট্রাভায়োলেট রশ্মি ইত্যাদি কারণকে ধরে শীতে ত্বকের পাঁচ ধরনের সমস্যার কথা জানালেন বিশেষজ্ঞরা। সমাধানও আছে।
শুষ্কতায় সমাধান
হাত-পা-ঠোঁট ফেটে যাওয়া, চামড়া ওঠা এ সময় খুব সাধারণ। তৈলাক্ত ত্বক এ সময় ভালো থাকলেও শুষ্কতার সমস্যায় অনেকেই পড়েন, জানালেন আয়ুর্বেদিক রূপবিশেষজ্ঞ রাহিমা সুলতানা। সমাধান হলো বেশি বেশি পানি পান এবং ত্বক যেন সারাক্ষণ আর্দ্র থাকে, তা খেয়াল রাখা। তৈলাক্ত ত্বক ছাড়া বাকি ত্বকে যদি মানিয়ে যায়, তাহলে তেল আছে, এমন ভারী ক্রিম ব্যবহার করা উচিত। তৈলাক্ত ত্বকের জন্য হালকা ময়েশ্চারাইজার বেছে নিন। গলা ও চেহারা ভালোভাবে পরিষ্কার করে তারপর লাগাতে হবে। এ ছাড়া জলপাই তেল, গোলাপজল, গ্লিসারিন সমপরিমাণে মিলিয়ে স্প্রে বোতলে ভরে সঙ্গে রাখুন। যখনই প্রয়োজন হবে, ত্বকে স্প্রে করে নেবেন।
রূপবিশেষজ্ঞ শারমিন কচি জানালেন আরেকটি সমাধান। মন না চাইলেও প্রতিদিন গোসল করতে হবে। মুখ ধুতে হবে কয়েকবার। এতে ত্বকের ওপরের স্তর পানির ছোঁয়া পাবে। আর্দ্রতা ফিরে আসবে। সাবান ও ময়েশ্চারাইজারে যেন ক্রিমের পরিমাণ বেশি থাকে। বেশি ক্ষারযুক্তগুলো এই দুই মাস এড়িয়ে চলুন।
ত্বক পুড়ে যায়
শীতের সময় রোদের তাপে আরাম করে বসেন অনেকেই। কিন্তু এই সময় আপনার ত্বক পুড়ে যেতে পারে। সরাসরি ত্বকে প্রভাব ফেলে সূর্যের আলট্রাভায়োলেট রশ্মি। ভালোভাবে সানস্ক্রিন লাগিয়ে বের হোন। আর কোনো কারণে ত্বক যদি পুড়েই যায়, ডাবের পানি দিন, রোদে পোড়া ভাব কমবে, জানালেন রাহিমা সুলতানা। ডাবের পানি বরফের কিউব করেও ব্যবহার করা যায়। বেসন আর ডাবের পানি মিলিয়ে পেস্টের মতো করেও লাগাতে পারেন। তবে পেস্ট বানিয়ে ২০ মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর চেহারায় প্রয়োগ করুন।
রোদে পোড়ার কারণে চেহারায় অসম একটা টোন আসে। কোথাও পোড়া ভাব থাকে, কোথাও থাকে না। এ ক্ষেত্রে আলুর রস ১ চা-চামচ, বেসন আধা চা-চামচ, মধু সিকি চা-চামচ, দুধ ১ চা-চামচ মিশিয়ে লাগাতে পারেন। ত্বক যদি তৈলাক্ত হয়, তাহলে দুধের বদলে টক দই বেছে নিন। ডাবের পানিতে আছে পটাশিয়াম, মিনারেল; আলুতে আছে প্রাকৃতিক ব্লিচ; টমেটোতে প্রাকৃতিক ব্লিচ, লাইকোপিন, ভিটামিন সি। এ কারণে ত্বকের টোনের অসম ভাব কমিয়ে আনতে এই উপকরণগুলো কমবেশি সহায়তা করে।
ত্বকের নানা অ্যালার্জি
শীতের সময় ত্বকে অ্যালার্জির সমস্যাও বেশ বেড়ে যায়। সোরিয়াসিস, অ্যাকজিমা, দাদ, উইন্টার র্যাশ ইত্যাদি সমস্যার কথা উল্লেখ করলেন শারমিন কচি। অনেকের সোরিয়াসিস শরীরজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। পায়ের আঙুলের ফাঁকে ফাঁকে অ্যাকজিমা হতে পারে। ফুসকুড়ির মতো পুরু হয়ে স্থানটি শক্ত হয়ে যায়। চুলকায়ও। অনেকের গুটি গুটি উঠে মুখ ভরে যায়। অনেকের আবার চাকা চাকা হয়ে ত্বক ফুলে ওঠে। উলের পোশাক পরার কারণেও অনেকের দাদ হয়। ত্বকের যে জায়গাগুলোয় ভাঁজ পড়ে,
পড়ে, অনেকের সেখানে আলগা একটা ত্বকের স্তরও হয়।
সমস্যা অনেক। তবে সমাধানও আছে, পথ বাতলে দিলেন শারমিন কচি। শুষ্কতা এই সমস্যাগুলোর অন্যতম মূল কারণ। বছরের তিন মাস ভিটামিন খাওয়ার যে পরামর্শ দেওয়া হয়, সেটা এ সময়কে ঘিরে খেলেই ভালো। ভিটামিন ই, ডি ও সি যদি খাবারের মাধ্যমে নেওয়া না যায়, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ট্যাবলেট আকারেও খাওয়া যায়। র্যাশের জন্য জলপাই তেল অল্প একটু পানির সঙ্গে মিলিয়ে ত্বকে লাগাতে পারেন। পানির সঙ্গে মিলিয়ে লাগালে ত্বকের ভেতরে সহজে চলে যাবে। আলগা ত্বকের জন্য ভ্যাসলিন ভালো কাজ করবে। গ্লিসারিন আর তেল সমপরিমাণে মিশিয়ে শরীরে লাগাতে পারেন। জায়গাটা এরপর সেলোফিন পেপার দিয়ে মুড়িয়ে দিন। সোরিয়াসিসের জন্য এক বালতি পানিতে ১ চা-চামচ ফিটকিরি আর এক চা-চামচ গোলাপজল মিলিয়ে গোসলের সময় ব্যবহার করতে পারেন। উপকার পাবেন, আশ্বাস দিলেন শারমিন কচি।