আমরা সব সময় ব্ল্যাকহেডস জনিত সমস্যা নিয়ে আলোচনা করে থাকি। কিন্তু আমাদের মাঝে এমন অনেকেই আছি যারা হোয়াইট হেডসের সমস্যায় জর্জরিত। হোয়াইট হেডস হল এক ধরনের ব্রণ যা মূলত গঠিত হয় যখন ত্বক দ্বারা নির্গত তেল বা মৃত কোষ দিয়ে ত্বকের রন্ধ্র ব্লক হয়ে যায়। আসলে মৃত কোষ বা তেলের কারণে মুখে ব্রণের দেখা দেয় এবং হোয়াইট হেডসের উদ্ভব ঘটে। সাধারণত হোয়াইট হেডস আপনার মুখের দিকে তাকিয়ে যে কেউ পরিষ্কার ভাবে দেখতে পাবে। কিছু ব্যয়বহুল ওষুধ ব্যবহার করে এই সমস্যা কাটিয়ে ওঠা যায় কিছু হাতের কাছে থাকা সাধারণ উপাদান ব্যবহার করেই আমরা পরিত্রাণ পেতে পারি এই সমস্যা থেকে।
হোয়াইট হেডস দূর করার উপায়-
১/হোয়াইট হেডস দূর করতে কর্নফ্লাওয়ার পানিতে মিশিয়ে এর সঙ্গে কয়েক ফোঁটা ভিনেগার মিলিয়ে হোয়াইট হেডসে লাগান। আধঘণ্টা পর কুসুম গরম পানিতে নরম কাপড় ভিজিয়ে তুলে ফেলুন। এরপর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
২/রাতেই কিছুটা মেথি বেটে হোয়াইট হেডস হয়েছে এমন স্থানে লাগিয়ে রেখে সকালে ঈষদুষ্ণ পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। সমস্যা কেটে যাবে।
৩/চন্দনের গুঁড়া ও গোলাপজল একসঙ্গে মিলিয়ে পেস্ট বানিয়ে ব্যবহারেও উপকার পাবেন। ২০-৩০ মিনিট পর ঈষদুষ্ণ পানি দিয়ে ধুয়ে নিন।
৪/হোয়াইট হেডস থেকে থাকলে ১০০ গ্রাম গোলাপ জলে ১ চা চামচ কর্পূর মিশিয়ে রেখে দিন। দিনে ২ /৩ বার তুলোয় এ গোলাপ জলের মিশ্রণ দিয়ে পরিষ্কার করে হোয়াইট হেডস থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
৫/নাকের পাশে বা ত্বকের যে কোনো জায়গায় হোয়াইট হেডস হলে সেটা কখনই চাপ দিয়ে বের করার চেষ্টা করবেন না। আতপ চালের গুঁড়োর সঙ্গে মসুর ডাল বাটা লাগালে এর থেকে মুক্তি পাবেন।
৬/দুই লিটার পানির মধ্যে ৫০টি নিমপাতা সেদ্ধ করতে হবে। পাতাগুলো নরম ও বিবর্ণ না হওয়া পর্যন্ত পানি ফুটাতে হবে। পানি সবুজ রং ধারণ করলে নামিয়ে বোতলে ঢেলে রাখতে হবে। প্রতিদিন গোসলের পানিতে ১০০মিলি পরিমাণের নিমপাতার পানি মিশিয়ে গোসল করলে চামড়ার ইনফেকশন দূর হবে। এছাড়া ব্রণ এবং হোয়াইট হেডস দূর হবে।
৭/ঘরোয়া পদ্ধতিতে ত্বক স্ক্রাব করতে পারেন। এজন্য চিনি, লেবুর রস এবং অলিভ অয়েল দিয়ে মাস্ক তৈরী করে নিন। এবার কিছুক্ষণ এই মিশ্রণ দিয়ে ত্বক ম্যাসাজ করে ধুয়ে নিন। চালের গুঁড়াও স্ক্রাব হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন।
৮/তরমুজের রস আর লেবুর রস ত্বক কে ঠান্ডা করার পাশাপাশি ত্বককে নরম করে। অন্যদিকে লেবু প্রাকৃতিক পরিষ্কারক। অতিরিক্ত তৈলাক্ত ত্বকে প্রতিদিন সকালে এটা লাগান। কারণ তৈলাক্ত ত্বকে হোয়াইটহেডস হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
৯/মুখে গরম ভাপ নেয়া যেতে পারে। একটা গামলায় ধোঁয়া ওঠা গরম পানি নিয়ে তার ওপর মুখ রাখতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে গামলা থেকে মুখের দূরত্ব কমপক্ষে যেন এক হাত থাকে। গরম ভাপ হোয়াইটহেডসের মুখ খুলতে সাহায্য করে আর খুব সহজে হোয়াইটহেডস পরিষ্কার করা যায়।
১০/মুলতানি মাটির তৈরী মাস্কও ব্যবহার করতে পারেন। এতে আপনার ত্বকের মরা কোষ দূর হবে। আমন্ড গুঁড়া করে এর সাথে গ্লিসারিন এবং এক চা চামচ মুলতানি মাটি মিশিয়ে স্ক্রাব হিসেবে মুখে হালকা ভাবে ঘষুন। তবে মিহি গুঁড়া করবেন না, একটু যেন দানাদার থাকে। এই স্ক্রাবটি মুখের হোয়াইট হেডস দূর করতে কার্যকরী ভুমিকা পালন করে।
১১/আরেকটি উপায় হল বেকিং সোডা আর পানি দিয়ে ঘন পেস্ট তৈরী করুন। তারপর হোয়াইটহেডস আছে এমন স্থানে লাগান। শুকানো পর্যন্ত অপেক্ষা করে হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
১২/মধুতে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল প্রোপার্টি আছে। আক্রান্ত স্থানে মধু , লেবু ভালো করে বিট করে মুখে লাগিয়ে রাখবেন ১৫ মিনিট। এতে করে হোয়াইটহেডস চলে যাবে।
১৩/ব্যবহৃত টি ব্যাগ হোয়াইটহেডস নিরাময়ের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। একটি টি ব্যাগের ভেতরে থাকা উপাদান গুলো নিন তারপর আক্রান্ত অংশে ৪-৫ মিনিট রাব করুন। সপ্তাহে ২বার করলেই অনেকখানি উপকার পাবেন।
১৪/টমেটো হল প্রাকৃতিক অ্যান্টিসেপ্টিক যা হোয়াইটহেদস দূর করে। টমেটোর খোসা ছাড়িয়ে ম্যাস করে নিন। এই পাল্প ঘুমোতে যাওয়ার আগে লাগিয়ে রাখুন। পুরো রাত এটি এফেক্টেড এরিয়াতে কাজ করবে। সকালে উষ্ণ গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
যদি আপনার ক্লগড পোরস থেকে থাকে তাহলে শুধু পানি দিয়ে মুখ পরিষ্কার করলে চলবে না। আপনার হোয়াটহেডস্ থাকুক আর না থাকুক ওপেন পোর পরিষ্কার করার জন্য সঠিক যত্ন দরকার। তবে একটা কথা মনে রাখবেন যখন আপনার ত্বকে ব্ল্যাকহেডস্ দেখা দেবে বুঝবেন যে আপনার পোরগুলো আংশিকভাবে ব্লক হয়েছে আর হোয়েটহেডস দেখলে বুঝবেন পুরোটাই ক্লগ হয়ে গিয়েছে। আমি পরামর্শ করবো যাদের এখনও হোয়েটহেডস হয়নি তারাও আগে থেকে ত্বকের যত্ন নিন আর যাদের হোয়েটহেডস হয়ে গিয়েছে তারা আর অপেক্ষা না করে এর থেকে পরিত্রাণের উপায় খুঁজে বের করুন। এখানে আমি সব ঘরোয়া উপায় বলেছি আশা করছি এগুলোতেই আপনার হোয়েটহেডস সমস্যার সমাধান হবে।