গরমে ব্যায়াম করার আগে যে বিষয়গুলো মনে রাখতে হবে
গরমে মধ্যে সাধারণ দৈনন্দিন কাজ করতেই খারাপ লাগে। তখন আবার ব্যায়াম, দৌঁড়ানো, জগিং যেন নিজের উপর কোনো অত্যাচার। কিন্তু এই ব্যায়াম যখন আপনার অভ্যাস হয়ে যায় তখন সেটি ছেড়ে দেওয়া বা অনিয়মিত করা স্বাস্থ্যের জন্য খুবি ক্ষতিকর ক্ষতিকর , এর সাথে এতদিনে গড়ে তোলা ভালো অভ্যাসটিও আর থাকবে না। এর জন্য ব্যায়াম তো চালিয়ে যেতেই হবে। কিন্তু গরম তো কমছে না। তাহলে জেনে নিন এ সময় ব্যায়ামে কী কী শারীরিক অসুবিধা হতে পারে, আর কেন হয় । আর এর আমাদের করণীয় কী।
গরম কিভাবে আমাদের শরীরের উপর প্রভাব ফেলে
এই আবহাওয়ায় প্রকৃতিতে উচ্চ তাপমাত্রা তো বিরাজ করে, এর সাথে আবার বাড়তি কাজ করা মানে, দৌঁড়ানো, জোরে হাঁটাহাঁটি, খেলাধূলা,ব্যায়াম তা আমাদের শরীরেও প্রচুর তাপ সৃষ্টি করে। এতে অসুস্থ হয়ে যাওয়ার সিরিয়াস ঝুঁকি আছে। আর এর জন্য, নিজেকে ঠান্ডা রাখতে হবে এতে শরীর ত্বকের দিকে রক্ত প্রবাহ বাড়িয়ে দেয়। এতে পেশীতে রক্ত প্রবাহ কমে যায়, হৃদযন্ত্রের স্পন্দন বাড়ে। আর যদি আর্দ্রতাও বেশি থাকে তাহলে আপনার শরীর আরও বেশি চাপ অনুভব করে, কারণ আপনার ত্বক থেকে ঘাম তাড়াতাড়ি শুকায় না। এতে করে শরীরের তাপমাত্রা আরও বাড়ে
কী কী সমস্যা হতে পারে
সাধারণ আবহাওয়ায় আপনার ত্বক, রক্ত কণিকা এবং ঘামের লেভেল তাপের সাথে সামঞ্জস্যতা সৃষ্টি করে। কিন্তু এই প্রাকৃতিক তাপমাত্রা বজায় রাখার পদ্ধতি অকার্যকর হয়ে পড়তে পারে যখন বাইরেও উচ্চ তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতা বিরাজ করে এবং আপনিও অতিরিক্ত কাজের মাধ্যমে শরীরে চাপ সৃষ্টি করেন। এর ফলে হতে পারে তাপমাত্রাজনিত নানান স্বাস্থ্য সমস্যা। যেমন–
হিট ক্রাম্পস– পেশীর গঠনে মধ্যে তীব্র ব্যাথা হল হিট ক্রাম্পস। পেশীতে স্পর্শ করলে ব্যাথা লাগে। শরীরের তাপ স্বাভাবিক থাকে।
হিট সিনকোপ এবং এক্সারসাইজ জণিত কলাপ্স– মাথা হালকা লাগে। অনেক সময় দাঁড়িয়ে থাকার পর বা বসা থেকে হঠাত উঠে দাঁড়ানোর সময় এমন লাগবে। এমনকি আপনি অজ্ঞানও হয়ে যেতে পারেন। ব্যায়ামের পর বা কিছু সময় বাদে এই লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
তাপমাত্রাজণিত অবসাদ– শরীরের তাপমাত্রা ১০৪ ফারেনহাইট বা ৪০ ডিগ্রী সেলসিয়াস পর্যন্ত বেড়ে যায়। বমি, মাথা ব্যাথা, দূর্বলতা, ঠান্ডা লাগা ইত্যাদি সমস্যা হতে থাকে। চিকিৎসা না নিলে বা এভাবে চলতে থাকলে হিট স্ট্রোক হতে পারে।
হিট স্ট্রোক– হিট স্ট্রোকে জীবনের ঝুঁকি সৃষ্টি হতে পারে। এই স্ট্রোক সৃষ্টি হয় যখন শরীরের তাপমাত্রা ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা ৪০ ডিগ্রী সেলসিয়াস বাড়ে। আপনার ত্বক হয়ত গরম কিন্তু শরীর ঘাম ছাড়া বন্ধ করে দেয় নিজেকে ঠান্ডা রাখতে। ব্যায়াম করার সময়ই আপনার স্ট্রোক ও হতে পারে। কিছুক্ষণ পর হয়ত ঘামতে শুরু করবেন আপনি।
এরকম কোনো লক্ষণ দেখতে পেলে দ্বিধা না করে ডাক্তারের স্মরণাপন্ন হন। অবহেলায় ব্রেইন ডেমেজ, অর্গান ফেইলিওর ফলে মৃত্যু ও হতে পারে।
সাবধানতা বজায় রাখুন–
গরম আবহাওয়ায় মধ্যে যখন ব্যায়াম করছেন, অবশ্যই খেয়াল রাখবেন নিচের বিষয়গুলো।
১। তাপমাত্রা কত– আবহাওয়ার খোঁজ রাখতে হবে । আপনার পরিকল্পনার সাথে বাইরের তাপমাত্রা সামঞ্জস্যপূর্ণ কিনা সেটা খেয়াল রাখুন।
২। নতুন আবহাওয়ায় মানিয়ে নেওয়া– আপনি যদি ঘরে ঠান্ডা পরিবেশে কুলার চালিয়ে ব্যায়াম করতে অভ্যস্থ হন, তাহলে বাইরে ব্যায়াম করতে গেলে নিজেকে একটু সময় দিন তাপমাত্রার সাথে মানিয়ে নেওয়ার জন্য। আস্তে আস্তে শুরু করুন এবং নিয়মিত একটু একটু করে সময় বাড়ান।
৩। পোশাকের দিকে খেয়াল রাখুন– যদি আপনি ব্যায়ামের ক্ষেত্রে নতুন হন, তাহলে একটি বাড়তি সাবধানতা বজায় রাখতে হবে পোশাকের জন্য। আপনার শরীর অতিরিক্ত তাপ নিতে অভ্যস্ত নাও হতে পারে। এর জন্য বার বার বিরতি নিন, অতিরিক্ত ভারী ব্যায়াম থেকে নিজেকে বিরত রাখুন।
৪। পর্যাপ্ত পানি এবং তরল পান করুন– পানি বা তরল কম গ্রহণে ডিহাইড্রেশন হতে পারে। ঠিক মত ঘাম হওয়া এবং শরীর ঠান্ডা রাখতে পানি খুবই উপকারী। পানির বদলে স্পোর্ট ড্রিঙ্ক ও পান করতে পারেন। এতে করে শরীরে সোডিয়াম, ক্লোরাইড এবং পটাশিয়াম ফিরে আসবে যা ঘামের সাথে আপনার শরীর থেকে বেড়িয়ে গেছে। কখন পিপাসা লাগবে সে পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন না, বার বার পান করুন।
৫। দুপুরের রোদ এড়িয়ে চলুন– ব্যায়াম করার সময় সকাল অথবা সন্ধ্যা বেছে নিন। এবং দুপুরের সময়টা এড়িয়ে চলুন।
৬। সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন– সূর্যের তাপে পুড়ে যাওয়া শরীরের ঠান্ডা হওয়ার ক্ষমতা হ্রাস করে এবং ত্বকের ক্যান্সারের সম্ভাবনা বাড়িয়ে তোলে। তাই ভালো মানের সানস্ক্রিন ব্যাবহার করুন।
৭। একটা ব্যাক আপ প্লান রাখুন– তাপ বা আর্দ্রতায় সমস্যার জন্য সবচেয়ে ভালো হয় ঘরে ব্যায়াম করা। বাইরে যদি করতেই হয় কাছাকাছি কোনো শপিং মলএ এসির বাতাস খেয়ে আসতে পারেন ব্যায়ামের পরে।
৮। স্বাস্থ্যঝুঁকিগুলো বুঝুন– আবশ্যই শরীরের অবস্থার দিকে খেয়াল করুন। কোনো অসুস্থতার লক্ষণ দেখা যায় কিনা বোঝার চেষ্টা করুন। সন্দেহ হওয়া মাত্র ব্যায়াম করা থামিয়ে দিন, এবং ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।
তাপমাত্রাজনিত শারীরিক সমস্যাগুলো প্রতিরোধ করা সম্ভব। শুধু নিয়মগুলো মেনে চলুন , সচেতন হন আর বেশি বেশি পানি পান করুন।
https://youtu.be/xcZo2LPAOz4